জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় অবস্থিত কয়েক শতাব্দীর প্রাচীন ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভেঙে একই স্থানে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার নির্মাণের কাজ উদ্বোধনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও সন্ধ্যায়

প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন:

সোমবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টার সময় সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনের সময় ‘মসজিদ মন্দির ভাঙলো কারা, বিশ্বশান্তির শত্রু যারা’ ‘রাম মন্দিরের উদ্বোধন- সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইন্দন’ ‘সাম্প্রদায়িক চিন্তা, জানাই তীব্র নিন্দা’ সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরবর্তীতে তারা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে ভিসি চত্বর হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে মানববন্ধন শেষ করে।

ঢাবির বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক বলেন, আজ ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের ভেঙে নির্মিত রামমন্দিরের উদ্বোধন করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে আমাদের আজকের এই মানববন্ধন। আপনারা সকলে জানেন যে, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর বিশ্বব্যাপী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। যার রেশ বাংলাদেশেও এসে পৌঁছেছিল।

সারা ভারতবর্ষে প্রায় ২০০০ মানুষ সে দাঙ্গায় মারা গিয়েছিল। সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশের প্রায় ৩০ টি জেলায় ব্যাপক ভাংচুর এবং সহিংসতা চালিয়েছে হিন্দু জনগোষ্ঠীদের উপর। লুটপাট করা হয়েছে মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ অসংখ্য ঘরবাড়ি। সেই একই সাম্প্রদায়িক উস্কানি আজকে দেওয়া হল রাম মন্দির উদ্বোধন করার মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকল ধরনের সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক উসকানির বিরুদ্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, এই ধরনের যেকোনো সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে পা না বাড়িয়ে বরঞ্চ সকল উগ্র সম্প্রদায়িক শক্তিদেরকে রুখে দিতে। কেননা ১৯৯২ সালের ধ্বংসযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি আমরা দ্বিতীয়বার দেখতে চাই না।

বাবরি মসজিদের স্থলে রাম মন্দির স্থাপনের মাধ্যমে উগ্র হিন্দু সম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হিন্দু মুসলিম ডিভাইডেশন রুল খেলার মাধ্যমে ক্ষীন স্বার্থ চরিতার্থ করার পায়তারা করছে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বাংলাদেশে এই ধরনের কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় এর জন্য দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহবান জানাই। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলসমূহ এই উগ্র বিষবাষ্প ছড়ানো ও অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এটা স্বীকার করেছে যে, বাবরি মসজিদ কোনো মন্দির ভেঙে বানানো হয়নি। বরং বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দির নয় মসজিদই ছিলো। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণ ও উদ্বোধনকে উস্কানি আখ্যা দিয়ে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করার।

আমার বিশ্বাস করি বাংলাদেশ সাধারণ মানুষ শান্তি প্রিয় এবং সকল ধরনের উগ্র সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে। আমরা চাই বাংলাদেশে সকল ধর্মের সম্প্রীতিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকুক। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদে এই নিন্দা প্রস্তাব পাশ করবে। সকল ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানিকে রুখে দিবে এবং সকল ধর্ম-বিশ্বাসের মানুষের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ বজায় রাখার জন্য আরও বেশি উদ্যোগী হবে।

প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ:

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের জোট প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আরমানুল হকের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগরীর নেতা জুয়েল মিয়া ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের অর্থ সম্পাদক স্কাইয়া ইসলাম।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরীর নেতা জহির রায়হান বলেন, “অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণের যে পাঁয়তারা চলছে, তা পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে চলেছে মোদি সরকার। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শাসকেরা সাম্প্রদায়িকতার পক্ষ নেয়। শাসকরা রাম ও রহিমের মধ্যে যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে, আমরা তা ঘোঁচাতে সর্বদা সচেষ্ট থাকব”।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার আহ্বায়ক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, “সামনেই ভারতের লোকসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাম মন্দির উদ্বোধন করা হলো। যার ফলে সে অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই”।

প্রসঙ্গত, ১৬ শতকে মুঘল সম্রাট জহিরুদ্দীন মুহাম্মদ বাবর এ স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যেটি বাবরি মসজিদ হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৯২ সালে কট্টরপন্থি হিন্দু জনতা রামের জন্মস্থানে একটি মন্দিরের ওপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে এটি গুঁড়িয়ে দেয়। পর সৃষ্ট দাঙ্গায় প্রায় ২০০০ মানুষ নিহত হয়েছিল।

সোমবার মসজিদের স্থলে রামের নামে তৈরি করা বিশাল মন্দিরের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।